ওমরাহ পালনের নিয়ম | পুরুষ ও মহিলাদের ওমরাহ পালনের নিয়ম
ওমরাহ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মক্কা মুকাররমায় কাবা শরীফ ঘিরে পালন করা হয়। হজের মতো এটি
নির্দিষ্ট সময়ে নয়; বরং বছরের যে কোনো সময়ে পালিত হয়। মুসলমানদের জন্য ওমরাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মার
পরিশুদ্ধি এবং গুনাহ মোচনের এক বিশেষ সুযোগ।
এই লেখায় আমরা ওমরাহ করার নিয়ম, ফজিলত, ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত, পুরুষ-মহিলাদের আলাদা নির্দেশনা এবং মক্কা-মদিনা
থেকে ওমরাহ করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ওমরাহ পালনের নিয়ম ধাপে ধাপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে বিভক্ত। প্রথম ধাপ হলো ইহরাম। মীকাত সীমায় পৌঁছানোর
আগে অবশ্যই গোসল বা অজু করে ইহরামের পোশাক পরিধান করতে হয়। পুরুষদের জন্য এটি দুটি সাদা সেলাইবিহীন কাপড়—একটি
কোমরে, অন্যটি কাঁধে। মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রঙ বা কাপড় বাধ্যতামূলক নয়, তবে শালীন পোশাক পরা এবং মুখ
খোলা রাখা শর্ত। ইহরাম বাঁধার সময় নিয়ত করে বলতে হয়:
اَللَّهُمَّ إِنِّي أُرِيدُ الْعُمْرَةَ فَيَسِّرْهَا لِي وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي “হে আল্লাহ, আমি ওমরা করতে চাই, তাই আমার জন্য এটি সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে এটি কবুল করুন।”
ইহরাম অবস্থায় অনেক বিষয় হারাম হয়ে যায়, তাই মীকাত পেরোনোর আগেই পূর্ণ ইচ্ছা (নিয়ত) ও “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা
লাব্বাইক…” বলে ইহরামে প্রবেশ করতে হবে। মক্কায় পৌঁছে মসজিদুল হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে দোয়া পড়তে হয়
এবং কাবা শরীফ দেখেই আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়।
এরপর শুরু হয় তাওয়াফ—কাবা শরীফের চারপাশে সাত চক্কর। প্রথম তিন চক্করে পুরুষরা হালকা দৌড় (রমল) করবেন এবং
বাকিগুলো স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করবেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমের কাছে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
পরবর্তী ধাপ হলো সাফা-মারওয়া সাঈ—সাফা পাহাড় থেকে শুরু করে মারওয়া পর্যন্ত সাতবার সাঈ করা। সবুজ চিহ্নিত
স্থানের মাঝে পুরুষরা দৌড়ে যাবেন। সাঈ শেষে তাহল্লুল (চুল কাটা বা মুন্ডন) করে ইহরামের বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত
হতে হয়। পুরুষদের জন্য মাথা মুন্ডন উত্তম, মহিলারা সামান্য চুল ছেঁটে নেবেন।
ওমরাহ করার ফজিলত
ওমরাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বড় মাধ্যম। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ سُمَىٍّ، مَوْلَى أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِي صَالِحٍ السَّمَّانِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم قَالَ "الْعُمْرَةُ إِلَى "الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ
لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ
“এক ‘উমরাহ’র পর আর এক ‘উমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হাজ্জে মাবরূরের
(বিশুদ্ধ বা গৃহীত) প্রতিদান।” (বুখারী ১৭৭৩, মুসলিম ১৩৪৯)
অন্য হাদিসে আছে, আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেন:
تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا
يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ
إِلاَّ الْجَنَّةُ
“তোমরা হজ্জ ও উমরা পরপর একত্রে আদায় করো। কেননা, এ হজ্জ ও উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ্ দূর করে দেয়, লোহা ও
সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়।” (তিরমিযি ৮১০)
রমজানে ওমরাহ করলে হজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। ওমরাহ মানুষের অন্তরের পাপ ধুয়ে দেয়, জীবনে বরকত আনে এবং
ইমানকে দৃঢ় করে। অনেক আলেম বলেন, সামর্থ্যবান মুসলমানদের জীবনে অন্তত একবার ওমরাহ করা উচিত, যদিও এটি হজের মতো
ফরজ নয়।
ওমরার ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ
ওমরার ফরজ
ইসলামি পরিভাষায় ফরজ সেই সমস্ত অপরিহার্য কাজ যা ব্যতীত ইবাদত সহীহ (বৈধ) হয় না। ওমরাহ পালনের
ক্ষেত্রেও ফরজ
রয়েছে, যেগুলো করতে ব্যর্থ হলে ওমরাহ শুদ্ধ হবে না। এর সংখ্যা দুইটি:
ইহরাম গ্রহণ: নির্ধারিত মীকাত সীমান্তে পৌঁছার পূর্বেই ওমরাহর নিয়ত করে ইহরামের
অবস্থায় প্রবেশ
করা।
কাবা শরীফের তাওয়াফ: কাবা শরীফের চারদিকে সাত চক্কর ঘোরা ওমরাহর দ্বিতীয় ফরজ কাজ।
তাওয়াফ ছাড়া
ওমরাহ সম্পূর্ণ হয় না।
ওয়াজিব
ওয়াজিব সেই সকল কাজ যা ওমরাহ পালনকালে অবশ্য পালনীয়, তবে ফরজের মতো নয়। কোনো ওয়াজিব কাজ
ছুটে গেলে
ওমরাহ বাতিল না হলেও کفّارة (ক্ষতিপূরণ) স্বরূপ নির্ধারিত দম (পশু কোরবানি) দিতে হয়। ওমরাহর
ওয়াজিব কাজ
মূলত দুইটি:
সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা: কাবা তাওয়াফের পর সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতবার
দ্রুত
পদক্ষেপে চলা বা দৌড়ানো ওমরাহর একটি আবশ্যিক অংশ। হাজেরা (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত এই কাজটি নবী
(সা.) নিজে
পালন করেছেন এবং সাহাবীদেরও করতে বলেছেন।
চুল কাটা বা মুন্ডন: ইহরাম অবস্থার নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হতে মাথার চুল ফেলে দিতে হয়।
পুরুষরা
সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছোট করবেন, আর নারীরা চুলের কিছু অংশ কেটে নেবেন।
সুন্নত
সুন্নত হলো এমন কাজ যা করলে সওয়াব, না করলে গুনাহ নেই, তবে ওমরাহর সৌন্দর্য বাড়ায়। যেসব সুন্নত
কাজ
রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিত পালন করেছেন:
পুরুষদের জন্য ইহরামের পোশাক ও আচরণে কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে। ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢাকা যাবে না এবং পায়ে
সেলাইযুক্ত জুতা পরা যাবে না। তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে দ্রুত হাঁটা এবং সাঈয়ের সময় সবুজ দাগের মাঝে দৌড়ানো
পুরুষদের জন্য সুন্নত। তাহল্লুলে সম্পূর্ণ মাথা মুন্ডন করা উত্তম।
মহিলাদের নিয়ম
মহিলাদের ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক নেই, তবে শরীয়তসম্মত হিজাব মানতে হবে। মুখ ও হাত খোলা রাখতে হবে, কিন্তু
দেহ ঢেকে রাখতে হবে। তাওয়াফ ও সাঈয়ের সময় ভিড় এড়িয়ে চলা, ইবাদতে মনোযোগী থাকা এবং তাহল্লুলে চুলের সামান্য
অংশ কাটা মহিলাদের নিয়মের অন্তর্ভুক্ত।
মক্কা ও মদিনা থেকে ওমরা করার নিয়ম
মক্কায় অবস্থানরত কেউ নতুন করে ওমরাহ করতে চাইলে প্রথমে হারাম এলাকার বাইরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে। মসজিদে
তানইম, যা আয়েশা মসজিদ নামেও পরিচিত, হলো সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থান। সেখানে গিয়ে ইহরামের নিয়ত করে
তালবিয়া
পাঠ করে মক্কায় ফিরে এসে ওমরাহ শুরু করতে হয়।
মদিনায় অবস্থানরত কেউ ওমরাহ করতে চাইলে জুল হুলাইফা (আবিয়ার আলী) মীকাতে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে। এরপর
নিয়ত ও তালবিয়া পাঠ করে মক্কায় এসে ওমরাহ পালন করতে হবে।
ওমরাহ সফরে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গীর প্রয়োজন। হলি হজ এন্ড ওমরাহ, বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্বস্ত হজ ও
উমরাহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, যারা আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে। আপনার ইবাদতকে সহজ ও সুন্দর
করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সেবাসমূহ: