ওমরার ফরজ

ওমরার ফরজ ও ওয়াজিব গুলো কী কী? | সঠিকভাবে ওমরা পালনের নিয়ম

ওমরাহ (আরবি: العمرة) হল ইসলামে একটি পবিত্র ইবাদত যা হজের মতো নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। হজ নির্দিষ্ট দিনে ফরজ হলেও ওমরাহ সারা বছর করা যায় এবং তা করলে বিপুল নেকী অর্জিত হয়। সামর্থ্যবান মুসলমানরা বছরের যে কোনো সময়ে ওমরাহ পালন করতে পারেন। হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:

“তোমরা অধিক পরিমাণে হজ এবং ওমরাহ করো। কেননা এ দুটো দারিদ্রতা ও গুনাহকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন কামারের ধোঁয়া লোহাকে ময়লামুক্ত করে” (নাসাঈ, হাদিস ২৬৩০)
ওমরার ফরজ ও ওয়াজিব গুলো কী কী?

অধিকাংশ ইসলামি স্কলারদের মতে ওমরাহ ফরজ (অবশ্য পালনীয়) ইবাদত নয়, বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা – অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ইমাম আবু হানিফাইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন যে --

“ওমরাহ বাধ্যতামূলক নয়, বরং সুন্নত ও مستحب (পছন্দনীয়) ইবাদত”।

এই ব্লগে ওমরা আদায়ের ফরজ কাজসমূহ এবং অন্যান্য আবশ্যক বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ওমরাহ প্যাকেজসমূহ

ওমরার ফরজ (আবশ্যিক) কাজসমূহ

ইসলামি পরিভাষায় ফরজ সেই সমস্ত অপরিহার্য কাজ যা ব্যতীত ইবাদত সহীহ (বৈধ) হয় না। ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রেও ফরজ রয়েছে, যেগুলো করতে ব্যর্থ হলে ওমরাহ শুদ্ধ হবে না। বেশিরভাগ আলেমের মতে ওমরাহর ফরজ মূলত দুটি:

ওমরার ফরজ (আবশ্যিক) কাজসমূহ ০১

ইহরাম করা

নির্ধারিত মীকাত সীমান্তে পৌঁছার পূর্বেই ওমরাহর নিয়ত করে ইহরামের অবস্থায় প্রবেশ করা। ইহরাম বাঁধার মাধ্যমে ব্যক্তি ওমরাহর জন্য নিজেকে নিষিদ্ধ কিছু কাজ থেকে বিরত রাখার মানসিক প্রস্তুতি নেয়। নবী করিম (সা.) এর হাদিস “নিয়ত অনুযায়ীই সকল আমলের ফলাফল হয়” থেকে বোঝা যায় যে ইহরামের নিয়ত করা ও তালবিয়া পাঠ করা ওমরার প্রথম ফরজ কাজ। ইহরাম অবস্থায় অনেক বিষয় হারাম হয়ে যায়, তাই মীকাত পেরোনোর আগেই পূর্ণ ইচ্ছা (নিয়ত) ও “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…” বলে ইহরামে প্রবেশ করতে হবে।

উল্লেখ্য, হানাফি মাযহাবে ইহরামের নিয়ত ও তালবিয়া উচ্চারণ করাকে ওমরাহর শর্ত হিসেবে দেখা হয়; মীকাত অতিক্রমের পূর্বেই এটি করা বাধ্যতামূলক।

০২

বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা

কাবা শরীফের চারদিকে সাত চক্কর ঘোরা ওমরাহর দ্বিতীয় ফরজ কাজ। তাওয়াফ ছাড়া ওমরাহ সম্পূর্ণ হয় না। কুরআনে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন:

“আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের (কাবার) তাওয়াফ সম্পন্ন করে” (আল-হজ্জ ২২:২৯)

সুতরাং ওমরাহতে কাবার তাওয়াফ করা আবশ্যিক ইবাদত। তাওয়াফ এমন একটি ইবাদত যা নামাজের ন্যায় পবিত্রতা সহকারে আদায় করতে হয় এবং তাওয়াফের সময় দোয়া ও জিকির করতে হয়।

উপরোক্ত দুইটি কাজ ওমরার মূল ফরজ বা রুকন হিসাবে সর্বসম্মত ভাবে বিবেচিত। ফরজ কাজগুলোর কোনো একটি বাদ পড়লে ওমরাহ সহীহ হবে না। কেউ যদি বিনা ইহরামে মীকাত পার হয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন, তাহলে তাকে একটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দম (পশু কোরবানি) দিতে হবে – এ বিধান হাদিস ও সাহাবীদের ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত। তাই শুরুতেই সঠিক স্থানে ইহরাম বাঁধা ও তালবিয়া বলা অত্যন্ত জরুরি।

ওমরার ওয়াজিব কাজসমূহ

ওয়াজিব সেই সকল কাজ যা ওমরাহ পালনকালে অবশ্য পালনীয়, তবে ফরজের মতো নয়। কোনো ওয়াজিব কাজ ছুটে গেলে ওমরাহ বাতিল না হলেও کفّارة (ক্ষতিপূরণ) স্বরূপ নির্ধারিত দম (পশু কোরবানি) দিতে হয়। হানাফি মাযহাব অনুসারে ওমরাহর ওয়াজিব কাজ মূলত দুইটি-

ওমরার ওয়াজিব কাজসমূহ ০১

সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা

কাবা তাওয়াফের পর সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতবার দ্রুত পদক্ষেপে চলা বা দৌড়ানো ওমরাহর একটি আবশ্যিক অংশ। হাজেরা (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত এই কাজটি নবী (সা.) নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবীদেরও করতে বলেছেন।

“নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত” বলে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে” (২:১৫৮)

যা থেকে স্পষ্ট হয় যে সাঈ ওমরাহর আবশ্যক অংশ। শাফিঈ ও অন্যান্য অনেক স্কলারের মতে সাঈ ওমরাহর রুকন বা ফরজের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু হানাফিরা একে ওয়াজিব হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। সাঈ বাদ পড়লে দম দিয়ে ওমরাহ সম্পূর্ণ করতে হয়।

০২

মাথা মুন্ডন বা চুল ছাঁটাই (তাহল্লুল)

তাওয়াফ ও সাঈ সম্পন্ন করার পর ইহরাম অবস্থার নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হতে মাথার চুল ফেলে দিতে হয়। পুরুষরা সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছোট করবেন, আর নারীরা চুলের অল্পাংশ কেটে নেবেন। এটি পালন করা সুন্নত (সৃষ্টিগত নিয়মের) প্রতি বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শন।

ওমরার সুন্নত কাজসমূহ

ওমরার ফরজ ও ওয়াজিবের পাশাপাশি বেশ কিছু সুন্নত ও মোস্তাহাব (পছন্দনীয়) আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করলে ওমরাহ পূর্ণতা পায় এবং মহান সওয়াব অর্জিত হয়। এসব সুন্নত কাজ রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম নিয়মিত পালন করেছেন, তবে এগুলো পালন না করলে ওমরাহ বিনষ্ট হয় না বা দম দিতে হয় না।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নতে ওমরার উল্লেখ করা হলো:

ওমরার সুন্নত কাজসমূহ
→ ইহরামের পূর্ব প্রস্তুতি

মীকাতের আগে ইহরামের জন্য প্রস্তুতিস্বরূপ গোসল করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া, নখ-কেশ ইত্যাদি কেটে নেওয়া এবং পুরুষদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। এরপর ইহরামের দুই টুকরা কাপড় পরিধান করে দুই রাকাত নামাজ পড়া মোস্তাহাব আমল।

→ তালবিয়া পাঠ করা

ইহরামের নিয়ত করার পর জোরে জোরে তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...) পাঠ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

→ তাওয়াফ করা

তাওয়াফ শুরু করার সময় হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) চুম্বন বা হাত দিয়ে স্পর্শ করা; যদি ভিড়ের কারণে সম্ভব না হয় তাহলে দূর থেকে হাত তুলে তার দিকে ইশারা করে “বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর” বলা সুন্নত।

→ সাঈ করা

সাফা থেকে মারওয়ার দিকে সাতটি চক্করে সাঈ শুরু করবেন। সাঈ চলাকালে পুরুষরা দুই সবুজ দাগ বা আলো-চিহ্নিত স্থানের মধ্য দ্রুত দৌড়ে যাবেন, বাকি অংশ স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেন।

→ অন্যান্য মোস্তাহাব কাজ

ওমরাহ পালনকালে সম্ভব হলে বেশি বেশি তাওয়াফ করা (নফল), মক্কায় থাকাকালে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হারাম শরীফে গিয়ে আদায় করা, হাজরে আসওয়াদে চুম্বন দেয়ার চেষ্টা করা ইত্যাদি কাজও মুস্তাহাব ও প্রশংসনীয়।

আপনার হজ ও উমরাহ সফরের বিশ্বস্ত সঙ্গী: হলি হজ এন্ড ওমরাহ বাংলাদেশ

হজ্জ ও উমরাহর পবিত্র সফরে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গীর প্রয়োজন, যারা আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করবে। হলি হজ এন্ড ওমরাহ, বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্বস্ত হজ ও উমরাহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা আপনার ইবাদতকে সহজ ও সুন্দর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সেবাসমূহ:

ওমরাহ বুকিংয়ের জন্য কল ০১৮৪৪৫০৯১৯৯

ওমরাহ সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

না, ওমরাহ হজের মতো ফরজ নয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ইবাদত, তবে কিছু আলেমের মতে জীবনে একবার ওমরাহ ফরজ।

ওমরাহর ফরজ মূলত দুটি—(১) ইহরাম গ্রহণ, (২) কাবা শরীফের তাওয়াফ।

দুইটি—(১) সাফা-মারওয়া সাঈ, (২) মাথা মুন্ডন বা চুল ছাঁটা।

নিয়ত ও তালবিয়া পাঠ এবং মীকাত সীমার আগে ইহরামে প্রবেশ করা।

Our Affiliations ( Flight )
  • kuwait
  • emirates
  • saudia
  • biman
  • qatar
  • Air Arabia Logo
Our Affiliations ( Hotels )
  • raffles
  • inter continental
  • conrad
  • hilton
  • sahaza
  • Hyatt logo