বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ হজ পালন করতে মোট কত টাকা লাগে এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন। সাধারণত ওমরাহ হজের খরচ কিছু বিষয়ের ওপর
নির্ভর করে। ওমরাহ সফরের বাজেট নির্ধারণে ভিসা ফি, বিমান টিকিট, হোটেল খরচ, স্থানীয় পরিবহন এবং অতিরিক্ত
আনুষঙ্গিক ব্যয়ের আনুমানিক
হিসাব রাখা প্রয়োজন।
নিচে ব্লগে প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও আনুমানিক খরচের ধারণা দেওয়া হলো।
ওমরাহ হাজ্জ এ যাওয়ার পূর্বে যেসব খরচ সম্পর্কে জানা উচিত
ওমরাহ বা হজে যাওয়ার পরিকল্পনা করার সময় খরচের একটি পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো
গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যয়ের ক্ষেত্র, যেগুলো আগেভাগে বুঝে রাখা উচিত:
→ ভিসা ফি
সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের জন্য প্রথমেই ওমরাহ ভিসা নিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ২০২৫ সালে ওমরাহ ভিসা প্রসেসিং ফি
জনপ্রতি প্রায় ১৭,৫০০–১৮,০০০ টাকা (সার্ভিস চার্জসহ)। ভিসা প্রসেসিং সাধারণত ৩-১০ কর্মদিবস
লাগতে পারে, তাই পরিকল্পনা করে আগেই আবেদন করা উচিত।
বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য এখন ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ, বিশেষত নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া এয়ারলাইন্স) দিয়ে
ভ্রমণ করলে ৯৬ ঘণ্টার ট্রানজিট ভিসাতেও ওমরাহ করার সুযোগ থাকে।
→ বিমান টিকিট খরচ
ঢাকা টু জেদ্দা/মদিনা বিমানের টিকিট – ওমরাহ মৌসুম ও এয়ারলাইন অনুযায়ী খরচ পরিবর্তিত হয়। বাংলাদেশী হজযাত্রীদের
পছন্দের ৪টি বিমানবন্দর সবচেয়ে জনপ্রিয়:
কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর (জেদ্দা)
কিং খালিদ বিমানবন্দর (রিয়াদ)
মুহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর (মদিনা)
কিং ফাহাদ বিমানবন্দর (দাম্মাম)
ইকোনমি ক্লাসে ওয়ান-ওয়ে (একমুখী) ভাড়া সাধারণত ৫২,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। রিটার্ন টিকিটসহ সাধারণত ৮৩,০০০ –
১,০০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। সরাসরি ফ্লাইট (যেমন: সৌদিয়া এয়ারলাইন্স) সাধারণত ট্রানজিট
ফ্লাইটের তুলনায় কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও সময় সাশ্রয়ী। জাজিরা, বিমান বাংলাদেশ, ইউএস-বাংলা, গালফ এয়ার, কাতার
এয়ারওয়েজের টিকেটের মূল্য কাছাকাছি থাকে। অন্যদিকে ট্রানজিটসহ জাজিরা, ফ্লাইনাস তুলনামূলক কম দামে অফার দিতে
পারে।
টিপস: পিক সিজনে বিশেষ করে রমযানে বা ছুটির সময় বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পায়। তাই আগেভাগে টিকিট কাটলে, রিটার্ন
টিকিটসহ কাটলে এবং অফ-সিজনে ভ্রমণ করলে খরচ কমানো সম্ভব।
→ হোটেল খরচ (৩, ৪, ৫ স্টার হোটেল)
ওমরাহ যাত্রায় হোটেল ব্যয় আপনার বাজেটের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে। মক্কা ও মদিনায় হোটেলের মান ও কাঁঠামোর ওপর রেট
ভিন্ন হয়। ২০২৫ সালের ৩, ৪, ৫ স্টার হোটেল রুম ভাড়ার ধারণা দেওয়া হলো:
৩-স্টার বাজেট হোটেল: সাধারণত প্রতি রাত ৳৩,০০০ – ৳১২,০০০। উদাহরণ হিসেবে, মক্কার আইবিস স্টাইলস
মক্কা এ রুম ভাড়া ~৳৩,৪০০–১০,৫০০ প্রতি রাত। এই ধরনের হোটেলগুলো কিছুটা দূরে (হরাম থেকে ৭০০+ মিটার)
হতে পারে ।
৪-স্টার মানের হোটেল: প্রতি রাত প্রায় ৳৭,০০০ – ৳৩০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। যেমন: মক্কা টাওয়ারস
হোটেলে ~৳২০,৪০০–২৫,০০০ টাকা রুমভাড়া পাওয়া যায়। এসব হোটেল মাঝারি মানের সুবিধা দেয় এবং হরাম থেকে মধ্যম
দূরত্বে (৩০০–৭৫০ মিটার) অবস্থিত।
৫-স্টার বিলাসবহুল হোটেল: প্রতি রাত ৳৩০,০০০ থেকে শুরু করে ৳৫০,০০০+ পর্যন্ত হতে পারে (লোকেশন ও সেবার ওপর
ভিত্তি করে)। উদাহরণ: কাবা শরীফ সংলগ্ন মক্কা ক্লক টাওয়ার ~৳৫২,০০০–৫৮,০০০ এবং র্যাফেলস মক্কা
প্যালেস ~৳৫৩,০০০–৭০,০০০ প্রতি রাত। পাঁচ স্টার হোটেলগুলি হরাম শরীফের খুব কাছাকাছি অবস্থিত (০–২০০ মিটারের
মধ্যে) হওয়ায় যাতায়াত খুব সহজ হয়।
টিপস: হোটেল খরচ মৌসুমভেদে পরিবর্তনশীল। হজের ঠিক আগে বা রমজানে হোটেল রুমের দাম অত্যাধিক বেড়ে যায়, আর
অফ-সিজনে কম থাকে। অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখলে এবং গ্রুপ করে রুম শেয়ার করলে (৪ বা ৩ জনের এক রুম) জনপ্রতি খরচ কম পড়ে।
→ মক্কা ও মদিনার মধ্যে যাতায়াতে পরিবহন খরচ
সৌদি আরবে পৌঁছে মক্কা ও মদিনার মধ্যে যাতায়াত ও স্থানীয় ভ্রমণের খরচ পরিকল্পনায় রাখা জরুরি। অনেক প্যাকেজে
বিমানবন্দর পিকআপ/ড্রপ ও বাস সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে যাঁরা নিজ দায়িত্বে ভ্রমণ করবেন, তাঁদের জন্য কিছু সাধারণ
পরিবহন ব্যয়ের ধারণা নিচে দেওয়া
হলো:
জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে মক্কা: বিমানবন্দর থেকে মক্কা শহরে প্রাইভেট ট্যাক্সি বা মাইক্রোবাস ভাড়া
করলে আনুমানিক ২০০–৩০০ সৌদি রিয়াল লাগতে পারে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬,০০০–৯,০০০ টাকা (গাড়ির ধরন ও দরদামের
ওপর নির্ভর করে)।
মক্কা–মদিনা দূরপাল্লার বাস: সরকারের অনুমোদিত এসি বাস (দারব আল-ওয়াতান ইত্যাদি) মক্কা-মদিনা রুটে
চলাচল করে। নরমাল বাস ভাড়া ~৮৫ সৌদি রিয়াল এবং ভিআইপি বাস ১০০ সৌদি রিয়াল (প্রতি যাত্রী), অর্থাৎ বাংলাদেশি
টাকায় প্রায় ৳২,৫০০–৩,০০০।
হাই-স্পিড ট্রেন: মক্কা-মদিনার মধ্যে হারামাইন এক্সপ্রেস ট্রেন দ্রুত পৌঁছে দেয় (~২ ঘণ্টায়), তবে
খরচ বেশি। স্ট্যান্ডার্ড ট্রেন টিকিট ~১৫০ সৌদি রিয়াল (৳৪,৫০০) ও বিসনেজ ক্লাস~৪৫০ সৌদি রিয়াল (৳১৩,৫০০) পর্যন্ত
হতে পারে। সময় বাঁচাতে
অনেক যাত্রী এই ট্রেন ব্যবহার করেন, বিশেষত যাদের লাগেজ কম থাকে (ট্রেনে লাগেজ সীমাবদ্ধতা আছে)।
প্রাইভেট গাড়ি/ট্যাক্সি: সরাসরি মক্কা থেকে মদিনা অথবা ব্যক্তিগত সেডান বা মাইক্রোবাস ভাড়া করলে সৌদি
রিয়াল ৪০০–১,২০০ (৳১২,০০০–৩৬,০০০) পর্যন্ত খরচ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ৪ জনের পরিবার সেডান গাড়ি ~৪৫০ সৌদি রিয়াল
দিয়ে নিতে পারে। বড় দল
(১০-১৫ জন) নিয়ে হাইএস বা কোস্টার মাইক্রোবাস ভাড়া করলে ~৭০০ সৌদি রিয়াল বা বেশি লাগতে পারে।
দ্রষ্টব্য: অনেক এজেন্সির প্যাকেজে এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার ও মক্কা-মদিনা বাসভ্রমণ ফ্রি থাকে। স্বনির্ভর ভ্রমণে
গেলে বিশ্বস্ত পরিবহন ব্যবহার করুন, দরদাম আগে ঠিক করে নিন।
ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজসমূহ
বিশ্বস্ত ওমরাহ ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে প্যাকেজ নিলে সম্পূর্ণ সফরটি অনেক সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়। ২০২৫ সালের
জন্য বাংলাদেশে কিছু উল্লেখযোগ্য এজেন্সির প্যাকেজ ও খরচ নিচে তুলে ধরা হল:
হলি হজ এন্ড ওমরাহ বাংলাদেশ: দেশের অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত এজেন্সি ওমরাহ কাফেলা। তাদের রয়েছে-
পরামর্শ: অস্বাভাবিক কম মূল্যের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সতর্ক হোন। লাইসেন্সবিহীন বা
অপরিচিত এজেন্সির প্রতারণা এড়াতে সরকার অনুমোদিত হজ-ওমরাহ এজেন্সি ও তাদের প্যাকেজ নিন।
অতিরিক্ত ব্যক্তিগত ব্যয়
উপরে উল্লেখিত মূল খরচগুলো ছাড়াও কিছু অতিরিক্ত খরচের ব্যাপারে প্রস্তুত থাকা উচিত:
খাবারের খরচ: অনেক ওমরাহ প্যাকেজে খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে না বা আংশিক থাকে। সৌদি আরবে খাবারের দাম
তুলনামূলক কম এবং বৈচিত্র্যময়। মক্কা ও মদিনায় বাংলাদেশি/দক্ষিণ এশীয় রেস্তোরাঁতে এক বেলা খাবার মাত্র
৳২৫০ – ৳৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
স্থানীয় যাতায়াত ও ছোটখাট ভ্রমণ: হোটেল যদি হারাম থেকে দূরে হয় (যেমন আজিজিয়া বা মদিনায় থেকে কিছুটা
বাইরে), তখন প্রতিদিন নামাজের সময় আসা-যাওয়ার জন্য শাটল বাস বা ট্যাক্সি লাগতে পারে। মক্কা শহরের অভ্যন্তরে
উবার/কারিম ইত্যাদি অ্যাপ ভিত্তিক
ট্যাক্সি সহজলভ্য, ৫-১০ কি.মি. দূরত্বের জন্য ১৫-৩০
সৌদি রিয়াল ভাড়া লাগতে পারে।
জিয়ারত: মক্কা ও মদিনার আশেপাশে ঐতিহাসিক ও ইসলামিক ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো পরিদর্শনকে জিয়ারত বলা
হয়। ভালো প্যাকেজে জিয়ারতের ব্যবস্থা ফ্রি থাকে। যদি প্যাকেজে না থাকে, তবে স্থানীয় ট্যুরের জন্য জনপ্রতি
২০-৩০ রিয়াল করে মাইক্রোবাস ভাড়া করে নেওয়া যায়, বা প্রাইভেটভাবে গাড়ি ভাড়া করলে ১০-১৫ জনের দলের
জন্য ১০০-২০০ সৌদি রিয়াল (৳৩০০০-৬০০০) লাগতে পারে।
অন্যান্য ব্যয়: ব্যক্তিগত কেনাকাটা (খেজুর, জমজম পানি পরিবহন, তসবিহ, জায়নামাজ ইত্যাদি স্মারক), মোবাইল
সিম ও ইন্টারনেট প্যাকেজ, অতিরিক্ত লাগেজ ফি, চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রস্তুতি (ঔষধপত্র) ইত্যাদির জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ
রাখতে হবে।
আপনার হজ ও ওমরাহর বিশ্বস্ত সঙ্গী – হলি হজ এন্ড ওমরাহ বাংলাদেশ
হজ ও ওমরাহর পবিত্র সফর মানেই আত্মিক শুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপূর্ব সুযোগ। আর এই মহামূল্যবান সফরে প্রয়োজন
একজন বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ সঙ্গী—যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা, সহায়তা এবং পূর্ণ আস্থার পরিবেশ
প্রদান করবেন।
হলি হজ এন্ড ওমরাহ বাংলাদেশ সেই আস্থার নাম, যারা বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশি মুসলিম ভাইবোনদের জন্য
সফল ওমরাহ কাফেলা পরিচালনা করে আসছে। হোক তা বাজেট প্যাকেজ কিংবা বিলাসবহুল ও প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা—আমরা প্রতিটি
যাত্রীকে দিই হৃদয় থেকে
যত্ন, সম্মান ও পবিত্র সফরের সর্বোচ্চ মানের সেবা।
বাংলাদেশ থেকে ২০২৫ সালে ওমরাহ হজ করতে মোট কত টাকা লাগতে পারে?
২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে বাজেট প্যাকেজে ওমরাহ করতে আনুমানিক ৳১,১০,০০০–৳১,৫০,০০০ খরচ হতে পারে। প্রিমিয়াম
ব্যবস্থায় খরচ ৳২,০০,০০০–৳৩,০০,০০০+ পর্যন্ত হতে পারে।
ওমরাহ ভিসা নিতে কী লাগে?
ওমরাহ ভিসার জন্য বৈধ পাসপোর্ট (৬ মাস মেয়াদসহ), পাসপোর্ট সাইজ ছবি, টিকিট, হোটেল বুকিং এবং নির্ধারিত ফি
প্রয়োজন হয়। ভিসা প্রসেসিং সাধারণত ৩-৭ দিন লাগে।
বাংলাদেশে কোন এজেন্সির ওমরাহ প্যাকেজ ভালো?
হলি হজ এন্ড ওমরাহ বাংলাদেশ এবং হিজাজ হজ ও ওমরাহ লিমিটেড বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত ওমরাহ
এজেন্সি।
মক্কা ও মদিনায় হোটেল খরচ কত?
৩ স্টার হোটেলের রুম প্রতি রাত ~৳৩,০০০–৳১২,০০০, ৪ স্টার ~৳৭,০০০–৳৩০,০০০ এবং ৫ স্টার হোটেল
~৳২০,০০০–৳৫০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে, অবস্থান ও মৌসুম অনুযায়ী।
ফ্লাইট ও যাতায়াতের খরচ কত?
ঢাকা-জেদ্দা রিটার্ন টিকিটের খরচ ~৳৮০,০০০–৳১,০০,০০০। স্থানীয় পরিবহন (মক্কা-মদিনা বাস/ট্রেন)
~৳২,৫০০–৳৪,৫০০ এবং প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া ~৳৬,০০০–৳১২,০০০+ হতে পারে।