কোন মাসে উমরাহ করবেন? | বাংলাদেশি হাজিদের জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইড
উমরাহ এমন এক ইবাদত, যা মুসলমানদের হৃদয়ে এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা জাগায়। এটি ফরজ নয়, তবে মহান আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম সহজ পথ। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰهِ
“তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও উমরাহ পূর্ণ করো।” (সূরা আল-বাকারা ২:১৯৬)
এই আয়াত থেকেই বোঝা যায়, উমরাহ হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ইবাদত যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পন্ন করা হয়। তবে প্রশ্ন হলো— কোন মাসে উমরাহ করা সবচেয়ে ভালো? বাংলাদেশের হাজিদের জন্য সঠিক সময় নির্বাচন মানে সওয়াব, আরাম, খরচ ও সুবিধার ভারসাম্যও নিশ্চিত করা।
প্রতিটি মুসলমানের জন্য উমরাহ শুধু একটি ভ্রমণ নয়, এটি একটি ইবাদত। উমরাহ বছরজুড়ে করা যায়, কিন্তু প্রতিটি মাসের পরিবেশ, খরচ ও ভিড় এক নয়। কেউ রমজানে যেতে চান বেশি সওয়াবের আশায়, আবার কেউ অফ-সিজনে যান শান্ত পরিবেশ ও কম খরচের কারণে। তাই সময় বেছে নেওয়ার আগে জানা দরকার, কোন মাসে কী পরিস্থিতি থাকে।
রমজানের দিনে মক্কা ও মদিনার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
রমজানের দিনে মক্কা ও মদিনার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারাবির ধ্বনি, ইফতারের আয়োজন, আর রাতভর ইবাদতের আবহ হাজিদের মন ভরে দেয়। রমজান মাসে উমরাহ করা সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“রমজানে উমরাহ করো, কারণ রমজানের একটি উমরাহ একটি হজের সমতুল্য” (সহিহ বুখারী)
রমজান মাসে উমরাহ করার সময় কিছু চ্যালেঞ্জও থাকে:
ভিড় অত্যধিক, বিশেষত শেষ দশকে।
হোটেল ও ফ্লাইটের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়।
শারীরিকভাবে দুর্বল বা বয়স্ক হাজিদের জন্য কষ্টকর হতে পারে।
তাই রমজানে উমরাহ করতে চাইলে আগেই বুকিং করা এবং অভিজ্ঞ এজেন্সির সহযোগিতা নেওয়া জরুরি।
মার্চ-এপ্রিল ২০২৬ (শাওয়াল মাসে) উমরাহ
শাওয়াল মাস রমজানের আগে আত্মিক প্রস্তুতি নেওয়ার আদর্শ সময়।
ভিড় তুলনামূলক কম থাকে, ফলে ইবাদতে মনোযোগ বাড়ে।
তাপমাত্রা মাঝারি, হজযাত্রীদের চাপও থাকে না।
ফ্লাইট ও হোটেলের খরচ কম থাকে।
অনেকে এই মাসে উমরাহ করেন যেন রমজানের আগে পবিত্র স্থানগুলোতে সময় কাটাতে পারেন এবং মন-প্রাণ প্রস্তুত করতে পারেন।
জুন–আগস্ট ২০২৬ মৌসুমের পর
হজ্জের পর এই সময়টাকে সাধারণত অফ-সিজন ধরা হয়। হজ মৌসুমের পরের সময়। যারা কম খরচে উমরাহ করতে চান, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত সময়। এই তিন মাসে সাধারণত উমরাহ যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
হজ্জ মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে ভিসা পেতে সমস্যা হয় না।
হোটেল ভাড়া ও পরিবহন খরচ কম থাকে।
যারা ভিড় এড়াতে চান, তাদের জন্য এই সময় উপযুক্ত।
ভিড় অনেক কম, তাই তাওয়াফ ও সাঈ ধীর ও সহজে করা যায়।
এই সময় হাজরে আসওয়াদ কাছে যাওয়া যায় ও চুমু খাওয়া যায়।
ডিসেম্বর ২০২৫ – জানুয়ারি ২০২৬ (রজব-শাবান)মাসে উমরাহ
রজব মাস ইসলামি বর্ষপঞ্জির চারটি পবিত্র মাসের একটি। এই মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়ে। এই সময় আবহাওয়া তুলনামূলক ঠাণ্ডা থাকে। বাংলাদেশের অনেক হাজি ডিসেম্বর মাসে উমরাহ করেন কারণ তখন বাজেট নিয়ন্ত্রণে থাকে ও তাপমাত্রা আরামদায়ক থাকে।
তাপমাত্রা আরামদায়ক (২০–৩০° সেলসিয়াসের মধ্যে) ও সহনীয় থাকে।
ফ্লাইট ও হোটেলের দাম কম থাকে।
ভিড় কম, তাই আরামদায়কভাবে ইবাদত করা যায়।
তাওয়াফ ও সাঈ ধীর ও সহজে করা যায়।
অনেক হাজি রজব মাসকে “আধ্যাত্মিক সফর” হিসেবে বেছে নেন, কারণ এটি রমজানের প্রস্তুতির সূচনা হিসেবেও ধরা হয়।
মাসভিত্তিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ
উমরাহ করার সময় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি মাসের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। কেউ যান রমজানের সওয়াবের আশায়, কেউ আবার অফ-সিজনের শান্ত পরিবেশ ও কম খরচের কারণে। কোন মাসটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
মাস
আবহাওয়া
ভিড়
খরচ
কার জন্য উপযুক্ত
রমজান
গরম
অত্যাধিক
অনেক বেশি
অভিজ্ঞ হাজি, বেশি সওয়াবপ্রত্যাশী
শাবান
সহনীয়
কম
কম
প্রথমবারের হাজি, রমজানের প্রস্তুতিতে আগ্রহী
রজব
উষ্ণ
মাঝারি
নিয়ন্ত্রিত
আধ্যাত্মিক ও নিবেদিত হাজি
সফর–জমাদিউল আখির
ঠাণ্ডা
কম
সবচেয়ে কম
পরিবারসহ বা বয়স্ক হাজি
শাওয়াল–যিলহজ্ব
গরম
বেশি
বেশি
হজ মৌসুমের হাজি
বাংলাদেশি হাজিদের জন্য টিপস
উমরাহ যাত্রায় সঠিক প্রস্তুতি, সময় নির্বাচন ও কিছু ছোট টিপস অনুসরণ করলে পুরো সফর অনেক আরামদায়ক হয়। আবহাওয়া, খরচ, ভ্রমণের সময়সূচি—সবকিছু বিবেচনা করে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকলে ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়। বাংলাদেশ থেকে যাত্রাকারী হাজিদের জন্য সহায়ক কিছু বাস্তব ও কার্যকর পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:
ভ্রমণের আগে সৌদি আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিন।
অফ-সিজনে যাত্রা করলে হোটেল ও ভিসা খরচ ২৫–৩০% পর্যন্ত কমে।
দীর্ঘ ফ্লাইটে আরামদায়ক পোশাক ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
ট্রেনিং, ট্রান্সপোর্ট ও গাইড সহায়তা দেয় এমন এজেন্সি বেছে নিন।
পরিবারসহ গেলে অফ-সিজন (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযুক্ত।
কেন হলি হজ এন্ড উমরাহ বেছে নেবেন?
হলি হজ এন্ড উমরাহ বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্বস্ত হজ ও উমরাহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, যারা আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে। ধর্ম মন্ত্রণালয় অনুমোদিত নির্ভরযোগ্য হজ ও উমরাহ ট্রাভেল এজেন্সি। আপনার ইবাদতকে সহজ ও সুন্দর করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সেবাসমূহ:
উমরাহ করার মাস নির্বাচন আসলে একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ রমজানের অফুরন্ত সওয়াব চান, কেউ খোঁজেন শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য। বাংলাদেশের হাজিদের জন্য ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টা সবচেয়ে সুবিধাজনক—কম খরচ, ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও কম ভিড়। তবে রমজানে উমরাহ করার সওয়াব তুলনাহীন। হলি হজ এন্ড উমরাহ বিশ্বাস করে “একজন হাজীর সন্তুষ্টিই আমাদের সাফল্য।”
আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে হাজীদের পাশে থাকি যাতে আপনার উমরাহ সফর হয় একদম নির্ভার ও শান্তিময়। তাই আমাদের এজেন্সি হতে পারে আপনার উমরাহ যাত্রার নিরাপদ ও বিশ্বস্ত সঙ্গী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—নিয়্যত যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। তখন সময়, খরচ, বা কষ্ট—সব কিছুই সহজ মনে হয়।
হ্যাঁ, উমরাহ হজের মতো নির্দিষ্ট মাসে সীমাবদ্ধ নয়। বছরের যেকোনো সময় উমরাহ করা যায়, তবে হজ মৌসুমে (শাওয়াল–যিলহজ্ব) সাধারণত ভিসা সীমিত থাকে। হজ্জের পর(জুন–আগস্ট) এই সময়টাকে সাধারণত অফ-সিজন ধরা হয়। যারা কম খরচে উমরাহ করতে চান, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত সময়। এই তিন মাসে সাধারণত উমরাহ যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
রমজানে উমরাহ করার ফজিলত কী?
রমজানে উমরাহ করা হজের সমান সওয়াব রাখে। প্রিয় নবী ﷺ বলেছেন: عُمْرَةٌ فِي رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً অর্থাৎ, “রমজানে উমরাহ করা হজের সমান।” (সহিহ বুখারী)
কোন সময় উমরাহ করলে খরচ কম হয়?
সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি (অফ-সিজন) সময়ে ফ্লাইট, হোটেল ও ভিসার খরচ তুলনামূলক কম থাকে। বাংলাদেশি হাজিদের জন্য এই সময়টি সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক।
রমজানে উমরাহ করলে কি খুব ভিড় হয়?
হ্যাঁ, রমজানে বিশেষ করে শেষ দশকে মক্কা ও মদিনায় ভিড় অত্যাধিক হয়। তাই শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকা ও আগে থেকে বুকিং করা জরুরি।
প্রথমবারের হাজিদের জন্য কোন সময় উমরাহ করা সবচেয়ে ভালো?
যারা প্রথমবার যাচ্ছেন, তাদের জন্য অফ-সিজন অর্থাৎ ঠাণ্ডা মৌসুম (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযুক্ত। তখন ভিড় কম থাকে এবং ইবাদতে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়।
উমরাহ ভিসা কখন থেকে পাওয়া যায়?
সাধারণত হজ মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই উমরাহ ভিসা ইস্যু শুরু হয়, যা সারা বছর খোলা থাকে রমজানের আগে পর্যন্ত। হলি হজ এন্ড উমরাহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও সহায়তা দিয়ে থাকে।
পরিবারসহ উমরাহ করলে কোন সময় ভালো?
পরিবারসহ গেলে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময় সবচেয়ে আরামদায়ক। ঠাণ্ডা আবহাওয়া, কম ভিড়, এবং সাশ্রয়ী প্যাকেজ সব মিলিয়ে এটি সবচেয়ে ভালো সময়।